Pages

Showing posts with label Sports. Show all posts
Showing posts with label Sports. Show all posts

Wednesday, 11 March 2015

একজন মাশরাফি

জীবনের কখনও নিজেকে সপ্তম আকাশের বাসিন্দা ভাবেননি। এ অহমিকা বোধটাই নেই মাশরাফির। তার জগৎটা একেবারেই ভিন্ন। আর দশজন ক্রিকেটারের মতো নয়। সে জগৎটাকে একান্ত নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। যেখানে সৎ, নির্ভীক এবং পরোপকারী একজন মানুষের বসবাস। খ্যাতি-প্রাচুর্য কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করে না। সাধারণের মধ্যেও সাধারণ তিনি।

মাঠের মাশরাফি এ ব-দ্বীপের নক্ষত্র। তিনি একাধারে যেমন দর্শক নন্দিত তেমনি পূজনীয় বটে। তারকালোকেও আলাদা করে চেনা যায় তাকে। মাশরাফিকে পছন্দ নয় দেশে এমন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম থেকে আড্ডার মাশরাফি সবত্রই আকর্ষণীয়। তার উপস্থিতিকে প্রেরণা হিসেবে দেখেন ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

ক্রিকেটার মাশরাফি সম্পর্কে সবারই কম-বেশি জানা। ব্যক্তি মাশরাফিকে নিয়েও ঢের লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু যতবারই তাকে নিয়ে লেখা হয়, তিনি আবির্ভূত হন নতুন রূপে। ওসব তারকা জগতের কথা না হয় থাক। বরং তার অন্য দিকগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরলে কেমন হয়। মাশরাফি যে আড্ডাপ্রিয় ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কোনো মানে হয় না। কিন্তু আড্ডার মাশরাফি কেমন ওটা বলা যায়। মাশরাফিকে দেখলে সাংবাদিকরা খুব কম সময়ই সংবাদের গন্ধ শুঁকেন। আড্ডার কথাই ভাবেন প্রথমে। একবার আড্ডা জমে গেলে ঘড়ির কাঁটার দিকে কারও খেয়াল থাকে না। মাঝে মাঝে হাসির রোল পড়ে। গল্পগুলো এত প্রাণবন্ত করে বলেন, মনে হবে চোখের সামনেই সবকিছু ঘটছে। একবার শুধু তাকে বিষয়টা ধরিয়ে দিলেই হয়। এরপর হাড়ির সব খবর লকলকে লাউয়ের ডগার মতো পুরো মাচায় ছড়িয়ে যাবে।

নড়াইলে এসএম সুলতানের সঙ্গে তার ঠাট্টা মশকরা হয়েছে বৈকি। সে কথাও একদিন বলছিলেন দ্বিধাহীন চিত্তে, ‘সুলতান দাদুকে বিখ্যাত চিত্রকর হিসেবে চিনতাম না। পাড়ার দাদু হিসেবে হাসি-ঠাট্টা করতাম। আমার বয়সটাও তখন শিল্প বোঝার বয়স ছিল না। তিনি মারা যাওয়ার পর হইচই পড়ে যায়। আমরা ভাবলাম, যে মানুষটা প্রতিদিন আমাদের সামনে দিয়ে যেতেন, তিনি এমন কী করেছেন যে, এত আলোচনা হচ্ছে। বন্ধুদের বললাম, চল সুলতান দাদুর বাড়ি গিয়ে দেখি উনি কী বানিয়েছেন। ১৯৯৪ সালেও আমাদের মনে তিনি সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। বড় হয়েই না বুঝেছি তিনি কী সৃষ্টি করেছেন।’

ওই যে আখ চুরি করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগার হয়েছিল। সে গল্পটাও ফেলে দেয়া যাবে। সেটাও শোনালেন মাশরাফি, ‘একবার দল বেঁধে চিত্রা নদীর পার হয়ে পাশের গ্রামের আখ খেতে গিয়েছিলাম। আখ কেটে ছোট ছোট করে আটি বেঁধে যেই বাড়ির পথ ধরব, অমনি খেতের মালিক হাঁক ছাড়েন। ইয়া বড় দা নিয়ে নদী পর্যন্ত তাড়া করে ছিল। আখ খাব কী, জান নিয়ে পালিয়ে বাঁচি। একেবারে নদী পর্যন্ত তাড়া! ধরতে পারলে কুপিয়ে শরীর থেকে আখের রস বের করে নিত।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্রান্ড নেম টাইগার। ক্রিকেটার হয়ে উঠার অনেক আগে টাইগার উপাধিটা জুটেছিল মাশরাফির। তাও এ উপাধি যেই সেই মানুষের কাছ থেকে পাওয়া নয়। থানার দারোগা বাবুরা বাঘ বলে ডাকতেন তাকে। মানুষ বাঘটাঘ মারলে ‘বাঘা’ উপাধি মেলে। কিন্তু কিশোর মাশরাফিকে তো বাঘ বলা হতো। আর বাঘের মতো হিংস্র প্রাণী বধের বয়সেও ছিলেন না তখন। তাহলে কী এমন করেছিলেন? মাশরাফিই বললেন, ‘খুব সাঁতার কাটতাম। ভরা বর্ষায় চিত্রা নদীতে প্রচ- স্রোত থাকে। ওই স্রোতের মধ্যেও বাঘের মতো সোজা সাঁতরে থানার পাড়ে গিয়ে উঠতাম। এজন্যই থানার পুলিশরা বাঘ বলতেন।’

ক্রিকেটার মাশরাফিকে গেছো মাশরাফিও বলা চলে। নড়াইল শহরে কোন বাড়ির নারিকেল গাছের দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কেমন তার মাপ বলে দিতে পারেন। কার গাছের আম খেতে সুস্বাদু সে কী আর জানেন না মাশরাফি। জাতীয় দলের খেলার পরও গাছে উঠার ঝোঁকটা ছিল নড়াইল এক্সপ্রেসের। দুরন্ত শৈশব পেছনে ফেলে মাশরাফি এখন জাতীয় দলের বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে এখন তাকে কত কী দিতে হয় নবীনদের। একমাত্র কন্যা আর পরিবারের কথাও তো ভাবতে হয় তাকে। নড়াইলের অনাথ ছেলেগুলোরই বা কী হতো মাশরাফি দায়িত্ব না নিলে। এমন পরোপকারী বলেই তো কেউ বিপদে পড়লে মাশরাফির দরজায় কড়া নাড়েন সর্ব প্রথম। এটাই তো হতে চেয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস, ‘চেষ্টা করলে কম-বেশি সম্পদ যে কেউ করতে পারে। জীবনে একেবারে কম উপার্জন করিনি। আমি সে অর্থ একার জন্য রাখতে চাইনি। নড়াইলে টিনশেড ঘরের জায়গায় হয়তো বিল্ডিং থাকত। কিন্তু এখন যে ভালোবাসা পাই সেটা কী পেতাম। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভালো মানুষ হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই। আমার দ্বারা যদি কারও সামান্য উপকার হয় এতেই খুশি।’